হয় ও সুখ-দুঃখ উভয়েরই পারে গমন করে। এ জ্ঞান লাভ হলে জীবের ভব-বন্ধন মোচন হয়, আর তার জন্ম হয় না। এ অবস্থাকেই ঠাকুর রামকৃষ্ণ পোড়া হাঁড়ির অবস্থা বলতেন। কাঁচা অবস্থায় হাঁড়ি ভাঙলে কুমার আবার তাকে গড়ে, কিন্তু হাঁড়ি পোড়ান হবার পর যদি ভাঙে, তাতে আর গড়ন চলে না; সেরকম এ জ্ঞানাগ্নি জীবকে পুড়িয়ে এমন অবস্থায় উপনীত করায় যে, দেহত্যাগে তার আর জন্ম হয় না। এ অবস্থাপ্রাপ্ত জীবের সঙ্গে ঠাকুর আর একটি উপমা দিতেন। সে উপমাটি - সিদ্ধ ধান। ধান আগুনে সিদ্ধ হলে তার যেমন আর অঙ্কুরোৎপাদিকা শক্তি থাকে না, তেমনি জ্ঞানাগ্নিতে যেসকল পুণ্যবান সিদ্ধ হন, তাঁদের আর পুনর্জন্ম হয় না। এমন কি জ্ঞানী যদি স্বেচ্ছায় দেহত্যাগও করেন, তবু আত্মহত্যাজনিত যে মহাপাপ, তাও তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না।
এক বস্তু কিরূপে এত রকমারি হয়েছেন, রেত-শোণিত কি রকমে হাড় হয়েছে, এ তত্ত্ব মা লীলাশক্তির গোচর। প্রত্যেক রকমেই সেই এক বস্তুর সত্ত্বা, শক্তির তারতম্যে কেবল ছোট-বড় উনো-দুনোরূপে পরিণত হয়েছে। যেখানে বেশি শক্তি, সেখানে বেশি বিকাশ; যেখানে কম শক্তি, সেখানে কম বিকাশ।
এখানে একটি মহা হেঁয়ালির কথা আছে, সেটি এই - বেশি শক্তিবিকাশ যেখানে, সেটিও যেমন স্বয়ং শক্তির ন্যায় অনন্ত অসীম, আর যেখানে কম শক্তির বিকাশ, সেখানেও অনন্ত অসীম। যে দিকে যাবে, সে দিকেই মূলশক্তির ন্যায় অকূল অপার। বড়টিও যেমন, ছোটটিও তেমন। অখণ্ডের খণ্ড হয় না। লীলাতে খণ্ড দেখায় বটে, কিন্তু সেই খণ্ডও অখণ্ডস্বরূপ অনন্ত ও অসীম। তাই ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলতেন, "তুই ভগবানের ছোট ভাবটিও লিতে পারবি নাই আর বড় ভাবটিও লিতে পারবি নাই।"
No comments:
Post a Comment