Thursday, March 29, 2018

সেখানে অনেকেই ঐ পরমহংস ঠাকুরের কথা বলছিল। কথাগুলি শুনতে বেশ লাগল। একজন বললে, কেশব সেন এত চেলা করলেন, বিলাতে গিয়ে বক্তৃতা দিয়ে বড় বড় সাহেবকে মোহিত করলেন, এখানে ভারতবর্ষে কত ব্রাহ্মমন্দির স্থাপন করলেন; তাঁর বক্তৃতায় এমন জোর যে, মানুষ শুনলেই তাঁর বশীভূত হয়ে যায়। তোমাদের মনে আছে - সেই বিডন গার্ডেনে যেদিন বক্তৃতা হলো, এত বড় বাগানটার বাইরে ভিতরে লোক আর ধরে না, শহর তোলপাড়। তারপর পরমহংস ঠাকুরের সঙ্গে কেশববাবুর দেখা হয়।

প্র। দেখা হয়ে কি হলো?

পা। সে লোকটি বললে, দিন কতক পরমহংস ঠাকুরের সঙ্গ করতেই কেশববাবুর মোড় ফিরে গেল - সে কেশব বদলে আর এক কেশব হয়ে গেলেন! নিজের শিষ্যদিগকে নিয়ে দক্ষিণেশ্বরে যাওয়া-আসা করতে লাগলেন। কখনো কখনো পরমহংস ঠাকুরকে নিজের ঘরে আনতেন। এ রকম হতে হতে কেশব সেনের সে বক্তৃতার চোট কোন্ দিকে উড়ে গেল, আর মুখটি বুজে পরমহংস ঠাকুরের পা-তলাটিতে বসে তিনি কি বলেন, সে-সব শুনতেন। একদিন পরমহংস ঠাকুর কেশববাবুকে বলেছিলেন, 'কেশব, তুমি কেমন বক্তৃতা কর, কিছু বল না?' তাতে কেশববাবু জবাব দেন, 'মশায়! কামারঘরে কি ছুঁচ বিক্রি?'

প্র। কি আশ্চর্য! একজন কালীর পূজারী বামুন, মোটে লেখাপড়া জানা নেই - তাঁর কাছে কেশববাবুর মতো এত বড় একটা লোক এমন হয়ে গেলেন! এ তো শহরে হাজার হাজার পূজারী বামুন, ভটচায, টোলের অধ্যাপক রয়েছেন, সংস্কৃত বোল আওড়িয়ে দিক আঁধার করে দেন। কই, এমন তো কেউ নয়, আর কোথাও আছে তাও তো শুনিনি।

No comments:

Post a Comment