Thursday, March 29, 2018

৭৪

বন্ধন, এ জ্ঞানটি হলেই তার ধোঁকার টাটী ভেঙে যায়; তার ধর্মাধর্ম, পাপ-পুণ্যের ধাঁধা ছুটে যায়; তার শুচি-অশুচি সমান হয়; তার গলার হার গলায় রয়েছে, সে দেখতে পায়; তার পূজা জপ ক্রিয়াকাণ্ড সব ঘুচে যায়; তার বিশ্বময় হরিদর্শন হয়; আর যা কিছু হয়, তা সে অবস্থায় না পড়লে, কেউ বুঝতে পারে না।

আমি অমুকের ছেলে, আমি অমুক, আমাকে জানিস না - এসব কথা যে-'আমি' বলে, সে-আমিটি মিথ্যা নয় বটে, কিন্তু বস্তুতঃ সে-আমি কে জান? সে-আমি - তিনি মাত্র। এ বিষয়টি বিচার-বুদ্ধিতে স্থির করা যায় না, হাজারবার শুনলেও বুঝা যায় না, তবে যখন ভগবান বুঝিয়ে দেন, দেখিয়ে দেন, তখন মানুষ বুঝতে পারে ও 'আমি'-হারা হয়। সৃষ্টিতে একটা বই দুটি জিনিস নেই। এ জীবজগতে যা কিছু দেখছ, সব সেই তিনি। মায়ার কৌশল, বন্ধনে জীব 'আমি' 'আমি' করে। মায়ার এমন মোহিনী খেলা, এ 'আমি'-টি যে তিনি, এ ব্যাপারটা আর জানতেই দেয় না। এ মায়ার খেলায় জীব মুগ্ধ। মায়া জীবকে তাঁর খেলা প্রাণান্তেও দেখতে দেন না! এ মায়া দ্বিবিধ ভাবে খেলা করছেন। এক বিদ্যা-মায়া আর এক অবিদ্যা-মায়া। যেসব জীব অবিদ্যা-মায়ার রাজ্যগত তারা কাম-কাঞ্চন নিয়ে গুরুহারা হয়ে বেহুঁশ হয়ে খেলছে। এরা মায়ার কোন খেলাই দেখতে পায় না। এদের দিন-রাত এক ধারা বইছে। আর যারা ভগবানের কৃপায় বিদ্যা-মায়ার অন্তর্গত, তাদের মায়া নিজের খেলা দেখিয়ে দিয়ে খেলাতে খেলাতে ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন। এমন জীব কোটির মধ্যে একজনও দুর্লভ। এমন একজন যদি মেলে, সে মায়ের বরপুত্র। এটি জেনো, ইনি বরপুত্র হলেও হাসি-কান্নার খেলা থেকে মুক্ত নন। যতদূর খেলা ততদূর মায়ার রাজ্য। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর থেকে কীটাণুকীট পর্যন্ত মায়ার ঘূর্ণিপাকে সব ঘুরছেন। মায়ার বন্ধন কেমন জান? - আভাসে যেমন রবারের গোলাকার

No comments:

Post a Comment