দড়ি। যে বস্তুকে বাঁধে, সেটা যতই মোটা হোক না কেন, দড়ির আয়তন ততই বৃদ্ধি হয়; আবার সেটা যতই সরু সূক্ষ্ম হোক না কেন, দড়ির আয়তন ততই সরু ও সূক্ষ্ম হয়। বস্তু যতই সূক্ষ্ম হোক, বন্ধনের মধ্যেই থাকতে হবে। এ বন্ধনের পর যে কি, তা আমি জানি না ও তার কিছুটা আভাসও জানি না। যিনি যতই বরপুত্র হোন না কেন, বাঁধনের হাতে মুক্তি নেই। তবে বরপুত্রের বাঁধন প্রার্থনীয় ও দেবেশবাঞ্ছিত। কেন না, এ বাঁধনে সুখ বই দুঃখ নেই। এঁরা মায়ার খেলা দেখতে দেখতে যান। এখানেও অবিদ্যার বন্ধনের মতো মনের হাসি-কান্না আছে বটে, কিন্তু এ হাসি-কান্না আর এক রকমের। এতে বেহুঁশ করে না, আর একটা মজা আছে। এসব মায়ার খেলা; মায়ার কৃপায় এ খেলা দেখবার জিনিস - শোনবারও নয় আর বলবারও নয়।
'আমি'-র কথা হচ্ছিল। মায়া এ 'আমি'-টিকে আর দেখতে দেয় না আর 'আমি'-ও একেবারে যায় না। রামকৃষ্ণদেব জীবকে এসব খবর জানিয়ে দেবার জন্য অনেক সাধনা করেছিলেন, আর মধ্যে মধ্যে বলতেন, 'নাহং নাহং, তুহুঁ তুহুঁ', অর্থাৎ 'আমি নই, আমি নই, তুমি - তুমি!' জীব 'আমি' ছেড়ে, 'তুমি তুমি' কখন বলে, রামকৃষ্ণদেবের কথিত একটি উপমা বলি শোন।
গরু পশুজাতি। বাছুরটি প্রসব হবামাত্র হাম্বা হাম্বা রব ধরে। হাম্বা হাম্বা মানে - হাম্ হে হাম্ হে অর্থাৎ 'আমি আমি'। বড় হলে চাষা লাঙলে বা গাড়িতে যুতে দিন-রাত খাটায়, তবু 'আমি' রবটি ছাড়ে না। বুড়ো হলো, অস্থিচর্মসার হলো, খাটুনির বিরাম নেই, তবু রবটি ছাড়ে না। তারপর মরে গেল; চামড়াটা নিয়ে চেঁছে ছুলে, পিটিয়ে, টেনে ঢাক ছাইলে; সেই চামড়া ঐ অবস্থাতেও বাজালে হাম্ হাম্ করে, রবটি আর ছাড়ে না। সব শেষে শিরা, আঁত ইত্যাদি নিয়ে তায় ক্রমাগত পাক দিয়ে দিয়ে তাঁত তৈরি
No comments:
Post a Comment