Thursday, March 29, 2018

৪৮

কালীবাড়ির বামুনরা এখন পাকা বুঝলেন যে, ঠাকুর মূর্ছা ও উন্মাদ-রোগগ্রস্ত। ঠাকুর অকর্মণ্য বলে মথুরবাবুর কাছে বলতে লাগলেন। মথুরবাবু মনে মনে নানারকম ভাবেন, কিন্তু মুখে কিছু বলতে সাহস করেন না।

রামকৃষ্ণদেবের মহিমা! এমন সময়ে দক্ষিণেশ্বরে এক ব্রাহ্মণী এসে জুটে গেলেন। এই ব্রাহ্মণী অদ্ভুত ক্ষমতাশালিনী। ভক্তিগ্রন্থ, পুরাণ, তন্ত্রাদি এঁর সব কণ্ঠস্থ। তান্ত্রিকমতে যাবতীয় সাধন-প্রণালী বিশেষ রকম জানেন। ঠাকুর ঐ ব্রাহ্মণীর কথা একবার বলেছিলেন যে, তিনি চতুর্বেদ-মূর্তিমতী। ব্রাহ্মণী ঠাকুরের অঙ্গে ভাব মহাভাব দেখেই তাঁকে ভগবান বলে চিনতে পারলেন, আর কালীবাড়িতে ঐ কথা রাষ্ট্র করতে লাগলেন। কিন্তু ব্রাহ্মণীর কথা প্রথমে কেউ গ্রাহ্য করলেন না। তারপর যখন শাস্ত্রের প্রমাণ দিয়ে লম্বা চৌড়া শ্লোক আওড়াতে লাগলেন, তখন মথুরবাবুর চমক লাগল। শাস্ত্রে ব্রাহ্মণীর বিলক্ষণ পারদর্শিতা দেখে মথুরবাবু অবাক হয়ে গেলেন, আর পরীক্ষা করবার জন্যে বড় বড় পণ্ডিত এনে তাঁর সঙ্গে বিচার করতে লাগলেন। ব্রাহ্মণীর কণ্ঠে যেন সরস্বতীর আবির্ভাব হলো, কোন পণ্ডিতই বিচারে হারাতে পারলেন না। শাস্ত্রে ভাব মহাভাবের যেসব লক্ষণ আছে, সেসব বাক্য ও শাস্ত্রের প্রমাণ দিয়ে আর পরমহংসদেবের মহাভাবের সময় তাঁর অঙ্গে সেসব লক্ষণ দেখিয়ে দিয়ে ঠাকুরকে ভগবান বলে সাব্যস্ত করলেন। পণ্ডিতেরা শাস্ত্রের উক্তিতে ও ঠাকুরের ভাবের লক্ষণে দেখলেন যে, সব মিলে যাচ্ছে, কিন্তু তবুও ঠাকুরকে ভগবান বলে স্বীকার করলেন না। পণ্ডিতদের পরাজয়ে ব্রাহ্মণীর বাক্যে মথুরবাবুর অনেক বিশ্বাস হলো ও ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি বাড়ল, তখন তিনি মা-কালীর পূজা থেকে ঠাকুরকে মুক্তি দিয়ে, মা-কালীর সেবার যেমন বন্দোবস্ত তেমনি ঠাকুরের সেবার বন্দোবস্ত করে দিয়ে নিজের বৈঠকখানায় দোতলার উপর তাঁকে রেখে দিলেন।

No comments:

Post a Comment