Thursday, March 29, 2018

৯৪

"সে দিবস পার্লামেণ্টের মেম্বর ডিগবী সাহেব পরমহংস রামকৃষ্ণ সম্বন্ধে যাহা লিখিয়াছেন, তাহা পাঠ করিয়া কোন্ ভারত-সন্তানের মনে আশার সঞ্চার না হয়? ডিগবী সাহেব বলেন, 'বর্তমান শতাব্দীর ইংলণ্ডের প্রধান লোক রবার্ট ব্রাউনিং ও জন রাস্কিন, কিন্তু তাঁহারাও নিরক্ষর রামকৃষ্ণের তুলনায় অন্ধকারে হাতড়াইয়া বেড়াইতেছেন'।"

ভাই, ভক্তির মহিমা দেখ আর ঠাকুর রামকৃষ্ণের মহিমা দেখ - কোথায় ঠাকুর রামকৃষ্ণ আর কোথায় বা ডিগবী সাহেব। সাহেবের ভিতরে ঠাকুর এমন একটি জিনিস রেখেছেন যে, তিনি মুগ্ধ হয়ে স্বদেশের পণ্ডিতদ্বয়কে ক্ষুদ্র হতেও ক্ষুদ্রতর মনে করেছেন। ধন্য ঠাকুর রামকৃষ্ণ আর ধন্য তাঁর ভক্তি! যেমন অন্ধকার দিয়ে আলোর মাহাত্ম্য বুঝা যায়, তেমন অভক্তিমান হৃদয়ের মধ্যে দিয়ে ভক্তিমানের মাহাত্ম্য লক্ষিত হয়।

কোথায় সাত সাগরের পারে ডিগবী সাহেব, যিনি রামকৃষ্ণদেবের নামটি শুনেছেন মাত্র আর তাঁর উক্তি, উপদেশ ও জীবনী সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ শুনেছেন! এইমাত্র সম্বল করে তিনি ঠাকুরের মহিমা বুঝলেন এবং ঠাকুরকে মহাপূজ্য জ্ঞানে অন্তরের মধ্যে রেখে নানাবিধ মহিমার প্রবন্ধ লিখলেন এবং জনসাধারণের মধ্যে স্বার্থশূন্য ও অভিমানশূন্য হয়ে ঢাক পিটিয়ে জানালেন।

আর এদিকে আমাদের স্বদেশী জাতভাইরা ঠাকুরের এত নিকটে থেকে, তাঁর যাবতীয় কথাবার্তা নিজের কানে শুনে, অলৌকিক জীবনী পর্যালোচনা করে ঠাকুরকে একজন উন্মত্ত পাগল স্থির করে ফেললেন। শুধু ঠাকুরকে উন্মত্ত স্থির করেই যে তাঁরা নিশ্চিন্ত আছেন, এমন নয় - সে সঙ্গে নিজদিগকেও কিছু স্থির করেছেন। স্থির করেছেন কি তা জান? - স্থির করেছেন যে, তাঁরা ভারি সেয়ানা, চতুর, বুদ্ধিমান, গুণবান, ধীমান, শ্রীমান, বীর্যবান অর্থাৎ যতগুলি মান বা বান আছে, সেগুলির একচেটিয়া অধীশ্বর।

No comments:

Post a Comment