Thursday, March 29, 2018

৪৭

মথুরবাবু সে কথা শুনে আনন্দে আটখানা হয়ে ঠাকুরের আর হৃদয়ের মাসিক বেতন ধার্য করে পূজায় নিযুক্ত করলেন।

মথুরবাবু মাঝে মাঝে ঠাকুরের কাছে ঈশ্বরীয় কথা আর তাঁর বীণা-বিনিন্দিত কণ্ঠের গান শুনেন। এই রকমে কিছু দিন কেটে গেল।

ঠাকুর মা-কালীর বেশকারী হলেন। নিত্য নিত্য মা-কালীর নূতন নূতন বেশ করেন। মথুরবাবু ও রানী দেখে আশ্চর্য হন। তারপর ঠাকুর পূজার কাজ নিলেন। দিন দিন পূজা করতে করতে তাঁর মনে রকম রকম ভাব উঠতে লাগল। মাঝে মাঝে বাহ্য জগৎ নেই বলে মনে হতে লাগল, আবার কখনো কখনো নিজের শরীরবোধ পর্যন্ত ভুল হতে লাগল। মনখানি মায়ের পিছু পিছু ছোটে আর রসনাটি আকুল হয়ে মা মা করে। কখনো কখনো মা মা বলে এত কাঁদেন যে, চোখের জল মেঝেতে পড়ে। কখনো কখনো মায়ের গায়ে কেবলই চামরব্যজন করতে থাকেন, আবার কখনো মাখন মিছরি নিয়ে 'মা, তুই খা মা' এই বলে মা-কালীর মুখের কাছে ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। কখনো কখনো পূজা করতে গিয়ে মায়ের পায়ে ফুল না দিয়ে, আপনার মাথায় দিয়ে বাহ্যহারা হয়ে বসে থাকেন, কখনো বা মা-কালীর নিঃশ্বাস পড়ছে কিনা দেখবার জন্যে নাকের কাছে তুলো ধরেন। কোন দিন বা আরতির সময় কাঁসর-ঘণ্টা-বাদ্য শেষ হলো, নহবত নিস্তব্ধ হলো, কিন্তু ঠাকুরের হাতের ঘন ঘন ঘণ্টা-রব ও পঞ্চপ্রদীপের চালনা আর থামে না। ঠাকুর যেন কলের পুতুল! হৃদয় ঠাকুরের আবেশ বুঝতে পেরে তাঁকে ধরেন, আর ঠাকুর বাহ্যহারা হয়ে যান। কালীবাড়ির বামুনরা মূর্ছারোগ বুঝলেন। এত দিন ঠাকুর মানুষের চোখে মানুষ ছিলেন, এবার পাগল হলেন। সাধারণের প্রকৃতির সঙ্গে না মিললেই পাগল!

ক্রমে ঠাকুরের ভাব-মহাভাব দিনের মধ্যে অনেকবার হতে লাগল।

1 comment: