Thursday, March 29, 2018

৪৬

ঈষৎ-বঙ্কিমনয়ন, বিশালবক্ষ, আজানুলম্বিতবাহু, বালার্কবৎ রামকৃষ্ণকে দর্শন করে একেবারে মনেপ্রাণে আকৃষ্ট হন। সোৎসাহে অপরের কাছে পরিচয় জিজ্ঞাসা করে জানলেন, ইনি বড় ভটচায মহাশয়ের কনিষ্ঠ। মথুরবাবু কনিষ্ঠকে তাঁর কাছে ডেকে আনতে ও মা-কালীর পূজায় ব্রতী করতে জ্যেষ্ঠকে বিনয় সম্ভাষে অনেক জিদ করেন। জ্যেষ্ঠ কনিষ্ঠের নিকট মথুরবাবুর অভিপ্রায় প্রকাশ করায় কনিষ্ঠ বললেন, 'আমি বড়মানুষের কাছে যেতে, কি পূজায় ব্রতী হতে পারব না।' মথুরবাবু যথাসাধ্য চেষ্টা করে অকৃতকার্য হয়ে দিনকতক চুপ করে রইলেন।

ঠাকুর রামকৃষ্ণ ছেলেবেলা থেকে সুন্দর সুন্দর মাটির দেবদেবীর প্রতিমূর্তি গড়তে জানেন। মৃন্ময় মূর্তিতে চক্ষুদান দেওয়া তাঁর একটি বিশেষ মহিমা ও শক্তি ছিল। চক্ষুদানে মাটির মূর্তি জীবন্ত বোধ হতো। দেশে গ্রামে পূজোপলক্ষে প্রতিমা গড়া হলে আগে গদাই ঠাকুরকে দেখানো হতো। ঠাকুরের বাল্য নাম গদাই। তিনি প্রতিমার গঠনদোষ দেখিয়ে দিতেন, কিন্তু চক্ষুদানটি তিনি নিজে না দিলে কারও মনঃপূত হতো না।

তাঁর ভাই যেখানে থাকেন সেখানে রামকৃষ্ণ একটি গঙ্গামাটির শিব ও একটি বৃষ গড়ে রেখে দিয়েছেন। ঘটনাক্রমে সেটি মথুরবাবুর চোখে পড়ে গেল। তিনি শিবটি ও ষাঁড়টি দেখে ঠিক জীবন্ত বলে মনে করলেন, এবং কে গড়েছে, সেই খবরটি নিয়ে রানীকে গিয়ে দেখালেন আর বললেন, এটি যাঁর গড়া, তাঁকে যদি মা-কালীর পূজায় রাখা যায়, তাহলে তিনি শীঘ্রই মা-কালীকে জাগ্রত করতে পারবেন। এই মনে করে তিনি ঠাকুরের জ্যেষ্ঠকে বিশেষ অনুরোধ করলেন এবং বললেন, 'আপনার ভাইকে মা-কালীর পূজায় রাখতেই হবে।' বড় ভাই বারবার জিদ করায় ঠাকুর আর না বলতে পারলেন না। বললেন, যদি হৃদুকে সহ রাখা হয়, তাহলে আমি থাকব।

No comments:

Post a Comment