Thursday, March 29, 2018

৭৭

জীব-জগৎ সৃষ্টি করে অগণ্য কোটি 'আমি' হয়ে খেলা করছেন। তিনি একটিমাত্র বস্তু, অনন্ত ঘটের ভিতর প্রবেশ করে অনন্ত 'আমি' হয়ে রয়েছেন। প্রত্যেক ঘটের প্রত্যেক অবস্থাতে সেই তিনি বই আর কেউ নয়। এ-জ্ঞান হলে বজ্জাত 'আমি' আর থাকে না; যা থাকে, তা তিনি - ঈশ্বর।

জ্ঞানমার্গীরা 'আমি'-কে যখন চিনতে পারেন, তখন তাঁরা 'সোঽহং' বলেন, আর ভক্তেরা 'তুমি' বা 'তিনি' বলেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণ ভিতরে পূর্ণ জ্ঞানী, কিন্তু জীবশিক্ষার জন্য তিনি ভক্তিভাব দেখাতেন। ঠাকুরের মূর্তিটি যেন জ্ঞানময়, আর সেই মূর্তিটি ভক্তির চাদরে ঢাকা। ঠাকুর জানেন যে কলিকালে জ্ঞানপথে যাওয়া বড় শক্ত, আর ভক্তিপথে সহজ; তাই সর্বদা তাঁর ভক্তির চাদরখানি গায়ে থাকত; অর্থাৎ ঈশ্বর-লাভে ভক্তিপথে যাবার জন্য তিনি সকলকেই উপদেশ দিয়েছেন।

'আমি'-দর্শনের নাম আত্মদর্শন। আত্মদর্শন হলেই বজ্জাত 'আমি' পালিয়ে যায়; সে আর থাকে না। পূর্ণজ্ঞান হলেই আত্মদর্শন হয় বা আত্মদর্শনে পূর্ণজ্ঞান হয়। পূর্ণজ্ঞানে আমিটা কিরূপ থাকে না, জান? - যেমন যতক্ষণ না ঠিক দুপুর বেলা হয় অর্থাৎ সূর্য ঠিক মাথার ওপরে না উঠে, ততক্ষণ বস্তুর একটা ছায়া থাকে; আর সূর্য মাথার ওপর উঠলেই চারদিকে তাকালে ঐ ছায়াটা দেখতে পাওয়া যায় না; ঠিক তেমনি জ্ঞানসূর্য পূর্ণভাবে বিকশিত হবামাত্র ঐ বজ্জাত আমিটিকে আর দেখতে পাওয়া যায় না। তখন বেশ বুঝতে পারা যায় যে, এত দিন ছায়ার মতো ঐ বজ্জাত 'আমি' ছিল। ছায়া মাত্রই ছায়া হয়েও অলীক, সুতরাং আমিটাও তদ্রূপ অলীক। অজ্ঞানে 'আমি' ছায়াভাবে থাকে; পূর্ণজ্ঞানে ছায়া অর্থাৎ বজ্জাত 'আমি' চলে যায়। তবে থাকেন কে? ছায়া যাঁকে ধরেছিল, তিনিই কেবল থাকেন। এ দর্শন অনবরত থাকে না; সংসারের

No comments:

Post a Comment