Thursday, March 29, 2018

৫৭

এখন আর সে কাম-কাঞ্চন নিয়ে ঘুমুতে চায় না। মাতালের যেমন মদ্যপানে রোক্, এর তেমনি ঈশ্বরীয় কথাশ্রবণ-কীর্তনে রোক্। এখন তার মন মনের মতন। এখন সে অবিদ্যার কুরূপ দেখতে পেয়েছে, মনের খেলার দৌড় বুঝেছে, মনের সঙ্গে লড়াই করতে শিখেছে, মনকে পেছু পেছু ছুটাতে পেরেছে, মনের ভিরকুটি ধরতে পেরেছে, মনের পুতুলবাজির খেলার হদিস পেয়েছে। ষষ্ঠ ঘরে যখন ওঠে, দেহী তখন ঈশ্বরদর্শন করতে পায়, কিন্তু ঈশ্বরকে ছুঁতে পারে না। ঠাকুর বলতেন, যেমন একটা লণ্ঠনের ভিতরের প্রজ্বলিত দীপশিখা লণ্ঠনের বাহির থেকে দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু ছুঁতে গেলে লণ্ঠনের কাঁচে বাধা লাগে, তেমনি দেহী এই জায়গায় বসে ঈশ্বরকে দেখতে পায়, কিন্তু ছুঁতে পারে না, একটা আবরণে আটক রাখে। এ অবস্থা দেহীর দুর্লভ অবস্থা। ঠাকুর বলতেন, পাঁচের ঘরে আর ছয়ের ঘরে বাচ খেলে বেড়ানো ভারি মজা।

বাচ খেলে বেড়ানো কি জান? - গঙ্গায় পানসী নিয়ে তকরার করে ঘোড়দৌড়ের মতো খেলা করা দেখেছ তো? একবার এধারে আসে, একবার ওধারে যায়, তাকে বাচ খেলা বলে। এখানে মনের বাচ খেলা একবার ছয়ের ঘরে, একবার পাঁচের ঘরে, অর্থাৎ একবার ঈশ্বরকে দর্শন করে, আবার নিচে পাঁচের ঘরে নেমে সেই দর্শন কীর্তন করে। এর নিচে অর্থাৎ চতুর্থ ঘাটে মজা আদতেই নেই। কেন না অনেক সময়ে অবিদ্যামায়া তাঁর শক্তিতে আচ্ছন্ন রাখেন! আবার এর ওপর ঘরে অর্থাৎ সাতের ঘরে মন উঠলে, দেহীর ভোগ কি আস্বাদ করার শক্তি থাকে না। এখানে মন মনহারা হয়, আর দেহীর সমাধি হয়। একেই বলে মনের লয়। লয় কেমন জান? এক ফোঁটা গঙ্গাজল নিজের রূপ গুণ হারিয়ে গঙ্গার জলে মিশে গেল। মনরূপ নুনের পুতুল গঙ্গাজলে গলে গেল, এত দিনে মনের খেলা ফুরুলো।

No comments:

Post a Comment