Thursday, March 29, 2018

৮২

তাও ঐ জল থেকে হয়েছে। তোমাকে পূর্বেই বলেছি, সূক্ষ্মই স্থূল হয়েছেন - যেমন বাষ্প অতি সূক্ষ্ম, ঐ বাষ্প থেকে মেঘ হয়েছে, মেঘ থেকে জলকণা, জলকণা থেকে জলবিন্দু, জলবিন্দু থেকে জল, আবার জল থেকে বরফ, তেমনি সূক্ষ্ম পরমাত্মা স্থূল হয়ে আধার হয়েছেন, আর ঐ আধারের ভিতরে সে জলরূপ পরমাত্মাই আছেন। জীবাত্মার জন্মও নেই আর মরণও নেই। জল থেকে হয়, জলে থাকে আবার জলেই মিশায়। ঘটের ভিতর জলরূপ যে জীবাত্মা, সেও যেমন ঘট ভাঙলে জলে মিশে যায়, তেমনি ঘটটিও স্থূল থেকে সূক্ষ্ম হয়ে সে জলে মিশে যায়। মরণ কাকে বলে জান? ঐ যে ঘট ভেঙে ঘটের জল সাগরে মিশে যায়, আর এক ঘটে প্রবেশ করে, ওর নাম মরণ। সূক্ষ্ম যেমন স্থূল হয়, স্থূলও তেমনি সূক্ষ্ম হয় - যেমন বরফ গলে জল, জল থেকে মেঘ বাষ্প ইত্যাদি।

এই যে পরমাত্মাকে সাগরবৎ বললাম, তাও বলা যায়, আবার মহাকাশও বলা যায়। বেদে শুনেছি মহাকাশ বলে।

"বেদের আভাস, তুই ঘটাকাশ, ঘটের নাশকে মরণ বলে।
শূন্যেতে পাপ পুণ্য মান্য গণ্য করে সব খুয়ালে॥"

বাষ্পের যেমন স্থূলাবস্থা - মেঘ, জলকণা, জল, বরফ, তেমনি মহাকাশের স্থূলাবস্থা পঞ্চভূত। আবার এ পঞ্চভূত পঞ্চীকৃত হয়ে জীব-জগৎ। সূক্ষ্ম থেকে স্থূল, স্থূল থেকে সূক্ষ্ম যেমন, তেমনি নিত্য থেকে লীলা ও লীলা থেকে নিত্য। এদিক ধরে ওদিকে যাওয়া যায়, আবার ওদিক থেকে এদিকে আসা যায়। একেই পরমহংসদেব অনুলোম-বিলোম বলতেন। তিনি আরও একটি বড় সুন্দর কথা বলতেন - যাঁর নিত্য, তাঁরই লীলা; যাঁর লীলা, তাঁরই নিত্য। এজন্য ঠাকুর শঙ্করের মতো জীব-জগৎ মিথ্যা - এ কথা বলেননি। তবে শঙ্করের মতকেও উড়িয়ে দেননি।

No comments:

Post a Comment