মন্দিরের নবরত্নের দিকে ঊর্ধ্বদৃষ্টি করে ও হাত তুলে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, "দেখিস, মা, পড়ে যাবি, পড়ে যাবি।" এই বলেই প্রায় বাহ্যশূন্য। ভক্তেরা ধরাধরি করে তাঁর ঘরে তাঁকে নিয়ে এলেন; কতক্ষণ পরে ঠাকুরকে কারণ জিজ্ঞেস করায় উত্তর দিলেন - মা মাতালের মতো টলতে টলতে নবরত্নের কার্নিশের ধারে ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, পাছে পড়ে যান, তাই ভয়ে এমন হয়ে গিয়েছিলুম।
রামকৃষ্ণদেবের লীলা শুনে বুঝ সাকারবাদীরা কত রকম রসাস্বাদ করেন। তাঁরা মাকে চৌদ্দপোয়াও দেখেন, আবার বিশ্বময়ী, ব্রহ্মময়ীও দেখেন। একজন ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন - ব্রাহ্মধর্মে হিন্দুধর্মে প্রভেদ কি? ঠাকুর উত্তর করেন - সানাই বাজানো দেখেছ? যেখানে সানাই বাজে, সেখানে দুজন সানাইওয়ালা থাকে। একজন কেবলমাত্র পোঁ ধরে থাকে আর একজন রাগরাগিণী বাজায়। ব্রাহ্মরা পোঁ ধরে থাকে আর সাকারবাদীরা রাগরাগিণী বাজায়।
রাগরাগিণী বাজায় - এর মানে, সাকারবাদীরা ভগবানকে নানারূপে, স্বরাটে, বিরাটে, সাকারে, নিরাকারে সকল রকমে সম্ভোগ করেন। রামকৃষ্ণদেব নানাভাবে সাধনা করে এবং ভগবানকে সকল রকমে সম্ভোগ করে জগৎকে এ বলে গেলেন - ভগবানে সব সম্ভব। তিনি সব হতে পারেন ও হন। আর একটি কথা, বারবার বললেন - ভগবানকে কেউ সীমাবদ্ধ করবে না। তিনি এটি আর অন্যটি নন বা হতে পারেন না, এ কথাটি জোর করে বলবে না। ভগবান সম্বন্ধে একটা বিশেষ মত প্রকাশ করলেই সেই অসীমকে সীমাবদ্ধ করা হয়; তাঁর সর্বশক্তিমত্তায় হস্তক্ষেপ করা হয়।
এখনকার ব্যবসাদার ধর্মোপদেষ্টাদের মধ্যে এ মন্তব্য বড়ই প্রবল - তাঁরা বলেন, এ আমাদের মতটি বা আমরা যা বলছি, সেটাই সত্য, আর অপরে যা করে বা বলে তা ভ্রান্ত। এ প্রকার বুদ্ধিযুক্ত অজ্ঞান ব্যবসাদারদিগকে নমস্কার।
No comments:
Post a Comment