Thursday, March 29, 2018

৩৪

জীবের অসত্তাতে ঈশ্বরের সত্তা থেকেও নেই। মায়াশক্তি সৃষ্টি করে জীবের জননী হয়ে তিনি জীবকে আপনাকে দেখিয়ে দিয়ে পরে ঈশ্বরকে দেখিয়ে দেন। যেমন দর্পণ-সহায়ে প্রতিচ্ছায়া দেখা যায়, সেইরূপ জীব মায়াতে সৃষ্ট হয়ে সেই মায়ার সাহায্যেই ঈশ্বর-দর্শন করে। মায়া পথ ছেড়ে না দিলে জীবের ঈশ্বর-দর্শন হয় না।

মায়াশক্তি ইচ্ছাময়ী, লীলাময়ী, এক হয়ে আবার দুভাবে খেলা করেন। এক বিদ্যাশক্তি আর একটি অবিদ্যাশক্তি। এক শক্তির মধ্যে দুরকম ভাব সে কেমন জান? রামকৃষ্ণদেবের এ সম্বন্ধে উপমা - বিড়ালের একই দাঁত, সেই দাঁতে আপনার ছেলেকে ধরে যখন নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়, তখন ছেলের ঘাড়ে মোটেই দাঁত লাগে না, কিন্তু সেই দাঁতে যখন ইঁদুর ধরে, তখন ইঁদুরের আর দুর্দশার সীমা থাকে না। সেই রকম যখন মায়া বিদ্যাশক্তির দ্বারা জীবকে ধরেন, তখন জীবকে ঈশ্বরের পথে নিয়ে যান, আর যখন অবিদ্যাশক্তির দ্বারা ধরেন, তখন জীবকে একেবারে মুগ্ধ করে রাখেন, হাতে পায়ে দড়ি বেঁধে সংসারে ফেলে দেন।

লীলাশক্তির সহায়ে সেই এক রামকৃষ্ণদেব কিরূপে জীবজগৎ হয়ে বিরাটরূপী হয়েছেন, তার কথা বললাম। আর তাঁর নিরাকার অবস্থা তিনি বলতেন যে, সে কি রকম তা মুখে বলা যায় না। সেখানে জীব-জগৎ নেই, সৃষ্টি নেই, সব উড়ে যায়, সেখানে তুমি যেমন শুনেছ, মায়া ভুল ও ঐন্দ্রজালিক তাই।

মায়া ভুল হয়েও সত্য, আর সত্য হয়েও ভুল, এ সম্বন্ধে পরমহংসদেবের একটি সুন্দর মীমাংসা আছে। তিনি বলতেন, জীবজগৎ যখন আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তখন কি করে মিথ্যা বলে বলি। আবার শঙ্করের যে মত, সে মতে জীব-জগৎ থাকে না। মীমাংসার কথা যেটি, সেটি এই: "তাও বটে, নাও বটে"। ঈশ্বরীয় অবস্থার ইতি হয় না, ভগবান এইটি, অপর কিছু নন বা হতে পারেন

No comments:

Post a Comment