ন্যায়, যাবতীয় নিগূঢ় ঐশীতত্ত্বপ্রকাশক রামকৃষ্ণলীলায় সকল ধর্মের, মতের বা পথের সরল জ্বলন্ত মূর্তিমান লক্ষণ সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অমানুষী সর্বসম্মত ধর্মতত্ত্বের স্ফুরণ এক ভগবান ভিন্ন অন্য কোথাও প্রকাশের স্থান নয়। যাবতীয় মতে কঠোর সাধনা দ্বারা ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করে ধর্মমাত্রই যে সত্য - এটি প্রতিপাদন করা এক ভগবান ভিন্ন আর কারও শক্তিতে নেই; কামকাঞ্চনগতপ্রাণ, মায়ামুগ্ধ, ঘোরতমসাচ্ছন্ন, একান্ত ইন্দ্রিয়সেবী ও জড়ভাবাপন্ন জীবকে চৈতন্যের মুরলী-বাদন দ্বারা জাগরিত করা এক ভগবান ভিন্ন অন্য কারও শক্তি নেই। অনধীতশাস্ত্র নিরক্ষর হয়েও যাবতীয় শাস্ত্রের নিগূঢ় তত্ত্ব সরল কথায়, সরল উপমাসহকারে ব্যাখ্যা করে জগতের যাবতীয় শাস্ত্রাধ্যায়ী সুধীমণ্ডলীকে মুগ্ধ ও নীরব করা এক ভগবান ভিন্ন অন্য কারও পক্ষে সম্ভব কখনই হতে পারে না। যে-আধারে ভগবৎ-শক্তির বিকাশ, তা যে আধারই হোক না কেন, সে আধারধারীকেই ভগবান বলতে হবে। যেখানে কৃষ্ণের ভাবের স্ফূর্তি, সেই আধার-দর্শনে কৃষ্ণ-দর্শন ভক্তমাত্রই বিশ্বাস করেন। কোন কোন যোগপথাবলম্বী বলেন, মানুষমাত্রই সাধনা দ্বারা কৃষ্ণ হতে পারে; কিন্তু এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়, কেন না ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব এ কথায় সায় দেন না। ভগবানের কৃপায় মানুষ কত দূর উচ্চপদ পান, সে সম্বন্ধে ঠাকুর বলেছেন, একজন ভক্ত ভগবানের সেবা করে। একদিন ভগবান নিজের বিছানায় শুয়ে আছেন, ভক্ত পদসেবা করছেন, এমন সময় তার ঘুম এসে গেছে; ভগবান ভক্তকে বললেন, "তোর ঘুম পেয়েছে, তা আচ্ছা; আমার এই বিছানার একপাশে শুয়ে ঘুমো।" ভক্ত প্রভুর আজ্ঞায় তাঁর বিছানায় ঘুমুতে লাগল। এতে বেশ বুঝা যাচ্ছে, জীব কখনই ভগবান হতে পারে না; অজ্ঞানের জোরে কেহ মানুন বা নাই মানুন, কেহ বলুন বা নাই বলুন, কিন্তু যে-আধারে ভগবৎশক্তির বিকাশ, সে আধারধারীকেই
No comments:
Post a Comment