ভগবান বলে মানতে হবে। তা না হলে বেদ, পুরাণ, তন্ত্র, গীতা সব মিথ্যা হয়। পুরাণাদি গ্রন্থ ভগবানে যে-সকল লক্ষণ আরোপ করেন, রামকৃষ্ণদেবের সে-সমস্তই রয়েছে। মহামায়ার এমনই খেলা, তিনি দেহধারী ভগবানকে জানিয়ে দিয়েও জানতে দেননি। এ কথাটি কেমন তা আমি তোমাকে একবার বলেছি, আবার খুলে বলি শোন। প্রভুদেবের সাধন-ভজনলীলায় একটি স্ত্রীলোক তাঁর কাছে এসে জুটলেন; তিনি যেমন বিদ্যাবতী, তেমনি ভক্তিমতী। শাস্ত্রীয় বিচারে কোন পণ্ডিত তাঁকে পরাজিত করতে পারেননি। তিনি প্রভুর লীলায় ব্রাহ্মণী নামে বিদিত। মথুরবাবু সে সময়ের যাবতীয় পণ্ডিতমণ্ডলীকে নিমন্ত্রণ দ্বারা আহ্বান করে ব্রাহ্মণীর সঙ্গে শাস্ত্রীয় বিচার করান, কিন্তু ব্রাহ্মণীকে কেহ পরাস্ত করতে পারেননি। ব্রাহ্মণী নিজের বিদ্যা ও ভক্তির সহায়ে রামকৃষ্ণদেবকে ভগবান বলে ঠাওরালেন, আর সেই শুভ তত্ত্ব পণ্ডিতমণ্ডলীর মধ্যে জ্ঞাপন করলেন। পণ্ডিতেরা বিশ্বাস না করায় দেহধারী ঈশ্বরাবতারের যে-সব লক্ষণ পুরাণ-গ্রন্থাদিতে লেখা আছে, সে-সব লক্ষণই রামকৃষ্ণদেবের মধ্যে রয়েছে, এ ব্যাপারটি পণ্ডিতদিগের ব্রাহ্মণী স্পষ্ট দেখিয়ে দিলেন। পণ্ডিতেরা শাস্ত্রবাক্যের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে লক্ষণগুলি চাক্ষুষ দেখলেন ও স্বীকার করলেন; কিন্তু লক্ষণধারী রামকৃষ্ণদেবকে আর ভগবান বলতে পারলেন না। এ দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, শাস্ত্রপাঠ বা শাস্ত্র ভগবানকে জানিয়ে দিয়েও জানিয়ে দিতে পারে না। সামান্য সরল যুক্তি ধরে গেলেও চিনতে পারি বা নাই পারি, অন্ততঃ স্বীকারও করতে হবে যে, যেখানে লক্ষণ আছে সেখানে বস্তুও নিশ্চয় আছে; কেন না ছায়ার ন্যায় লক্ষণই বস্তুর পরিচায়ক। যেখানে বস্তু আছে, সেখানে লক্ষণ, প্রকাশক-স্বরূপ বিদ্যমান থাকে; আর যেখানে লক্ষণ, সেখানে সে যে-বস্তুর লক্ষণ সে-বস্তুর সত্তা অবশ্যম্ভাবী। মনে কর, তুমি উদ্ভিদ্-শাস্ত্র অধ্যয়নে জানতে পারলে বট নামে একটি গাছ আছে।
No comments:
Post a Comment