ভাবোন্মত্ততা হলো, তখন 'গৌর' কথাটি ছেড়ে দিয়ে বলতে থাকেন 'আমার মাতা হাতি'; পরে যখন সেই ভাব অপেক্ষাকৃত ঊর্ধ্বে উঠল তখন 'মাতা হাতি' বই আর কিছুই বেরোয় না; পরে যখন ভাব আরো প্রবল হলো তখন সাধুর মুখে কেবল 'হাতি হাতি'; পরে অত্যুচ্চ অবস্থায় খালি 'হা' বলেই বাহ্যশূন্য ও নীরব অর্থাৎ সমাধিস্থ। নামের শরণাপন্ন হওয়া, নাম-শ্রবণ, নাম-কীর্তন করাকেই ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের মতে নারদীয় ভক্তি বলে। কলিকালে ভগবানলাভের এই নারদীয় ভক্তিই প্রশস্ত। রামকৃষ্ণদেবের ভাবটি কেমন - ভিতরে গভীর পূর্ণ ষোল আনা জ্ঞান, কিন্তু কাল ও পাত্র দেখে জীবশিক্ষার জন্য সর্বদা ভক্তির চাদরখানি গায়ে দিয়ে থাকতেন। হাতির যেমন দু-রকমের দাঁত - খাদ্য-দ্রব্য চিবিয়ে খাওয়ার জন্য ভিতরে লুকানো দাঁত আর বাইরে দেখাবার জন্য অন্য দাঁত; সেরকম ঠাকুরের ভিতরে জ্ঞান আর বাইরে লোকশিক্ষার জন্য ভক্তিভাব। নামমাহাত্ম্যে ঠাকুর যে গীতগুলি গাইতেন, বলি শোন -
(১) নামের ভরসা কালী করি গো তোমার।
কাজ কি আমার কোশাকুশি দেঁতো হাসি লোকাচার॥
নামেতে কাল-ফাঁস কাটে, জটে তা দিয়েছে রটে;
আমি তো সেই জটের মুটে, হয়েছি আর হব কার।
নামেতে যা হবার হবে, মিছে কেন মরি ভেবে,
একান্ত করেছি শিবে, শিবের বচন সার॥
(২) আমি দুর্গা দুর্গা বলে মা যদি মরি।
আখেরে এ দীনে না তারো কেমনে, দেখা যাবে গো শঙ্করী।
যদি নাশি গো-ব্রাহ্মণ, হত্যা করি ভ্রূণ,
সুরাপান আদি বিনাশি নারী,
আমি এ সব পাতক, না ভাবি তিলেক, ব্রহ্মপদ নিতে পারি॥
No comments:
Post a Comment