Thursday, March 29, 2018

১৩৬

আদ্যাশক্তি মহাদেবীর স্বামী, যিনি জীব-জগতের সৃজন পালন ও নিধন-কার্যের একমাত্র দেবতা, সেই তিনি যে এ দীন-দ্বিজ-নিরক্ষর-বেশে কাঙালের মতো মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভ্রাম্যমাণ, এ ব্যাপার জীবের মাথায় ঢুকে কি করে? ভগবান যখন লীলার বেশে অবতার হয়ে লীলাক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন, তখন তাঁকে চেনা বড়ই মুশকিল - বড়ই শক্ত। এখন বুঝলে তো ব্যক্ত হয়ে গুপ্ত আর সোজা হয়ে বাঁকা কাকে বলে?

সর্বশক্তিমান ভগবানের যাবতীয় অবস্থা অপেক্ষা দেহ-ধারণে লীলাক্ষেত্রে অবতরণ-ব্যাপার অতি দুর্বোধ্য ও বিস্ময়কর। জ্ঞানী ও যোগীর চক্ষে ভগবান তেজোময়, ভক্তের চক্ষে রসময়। এ কারণে জ্ঞানী ও যোগীর রুচি অপেক্ষা ভক্তের রুচি সহস্রগুণে প্রশংসনীয় ও বাঞ্ছনীয়। জ্ঞানী ও যোগীর রুচি একঘেয়ে অর্থাৎ ভগবানকে এক রকমেই সম্ভোগ করেন, ভক্ত কিন্তু নানা ভাবে ও রসে সম্ভোগ করেন। এ বিষয়টি ঠাকুর রামকৃষ্ণ সানাই-বাজনার উপমা দিয়ে বুঝিয়েছেন। যারা সানাই বাজায়, তাদের মধ্যে দুজনের হাতে সানাই থাকে; একজন খালি পোঁ ধরে সুরটি দিয়ে যায়, আর অপর ব্যক্তি বিবিধ রাগ-রাগিণী বাজায়। এখানেও তাই; জ্ঞানী ও যোগীর একভাবে আস্বাদ; ভক্তেরা ঝালে, ঝোলে, অম্বলে ও ভাজায় রসময়কে আস্বাদ করেন। এমন মনে করো না যে, ভগবান কেবলমাত্র তাঁর সাকার রূপটিই ভক্তকে দেখান, আর কিছু দেখান না। তা নয় - তিনি নিজেই যে জীব-জগৎরূপে পরিণত, তিনি নিজেই যে পঞ্চভূতাদি চতুর্বিংশতত্ত্ব, তিনি নিজেই যে জীব-জগতে আত্মারূপে বিরাজিত - এগুলিও দেখান, আবার তাঁর যে একটি নিরাকার ভাব আছে, তাও জানিয়ে দেন। জ্ঞানী ও যোগীরা ভক্তের ভাবের সন্ধানও পান না। ভক্ত ভগবানের যাবতীয় অবস্থা পরিজ্ঞাত হন। তৎসম্বন্ধে ঠাকুর রামকৃষ্ণ হনুমানের প্রতি রামচন্দ্রের একটি প্রশ্নের কথা উল্লেখ

No comments:

Post a Comment