যোগানন্দ ব্রহ্মানন্দ সুখদুঃখপার।
দেখিতে হলো না সাধ ব্রজের ব্যাপার॥
যোগানন্দ ব্রহ্মানন্দ কি আনন্দ ধরে।
যে আনন্দ গোপীর একবিন্দু নীরে॥
- শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণপুঁথি
দেহধারী ভগবানকে চেনা বড় শক্ত। তিনি যে-ভাবে বা যে-রূপেই আসুন না কেন, তিনি চিনবার শক্তি না দিলে কেউ তাঁকে চিনতে পারে না। এক চৈতন্য দ্বারা তাঁকে ধরা যায়। আমি দিবালোকে বস্তুদর্শনের ন্যায় স্পষ্ট দেখছি - ঠাকুর রামকৃষ্ণের শ্রীদেহখানিতে কেবল চৈতন্য জমাটবাঁধা। জল যেমন খুব ঠাণ্ডা পেয়ে জমাট বেঁধে বরফের আকারে পরিণত হয়, তেমনি ঠিক চৈতন্যই ভক্তির হিল্লোলযোগে প্রভুদেবের শ্রীদেহখানি হয়েছে। এই দেহধারী চৈতন্যময়কে ধরবার জন্য তাঁর প্রদত্ত চৈতন্যই একমাত্র উপায়। চৈতন্যের সহায়েই চৈতন্যময়কে জানা যায়। ভক্তিতে ও চৈতন্যে আমি বড় তফাত দেখছি না; যা ভক্তি, তাই চৈতন্য; যা চৈতন্য, তাই ভক্তি। মানুষের মন-বুদ্ধি যত দিন মলিন থাকে, তত দিন তারা স্বতন্ত্র-প্রকৃতিযুক্ত থাকে, কাজেই মন-বুদ্ধি এ উভয় নামে অভিহিত হয়, কিন্তু ভগবানের কৃপায় নির্মল অবস্থা প্রাপ্ত হওয়া মাত্র, সে দুটি জিনিস মিলে এক হয়। এ মিলন অবস্থায় তাদের পূর্ব-প্রকৃতি বা নাম কিছুই থাকে না, তখন তাদের নাম চৈতন্য। যে যে-প্রকৃতির বা জাতির বস্তু সে সে-প্রকৃতির বা জাতির বস্তু চিনতে পারে এবং তাকে ধরতে পারে; সুতরাং চৈতন্যবান চৈতন্যসহায়ে চৈতন্যময়কে ধরে, আর অচৈতন্যবানেরা অবিদ্যার বাজারের বস্তু চিনে ও তাদের ধরে। জীবের হৃদয়ে চৈতন্য দিয়ে চৈতন্যময় স্বেচ্ছায় ধরা দেন। প্রভুদেবের প্রেমিক ভক্ত দেবেন্দ্রবাবু একবার তাঁর স্বরূপ দেখে আনন্দোচ্ছ্বাসে অস্থির হন; ঠাকুর তৎক্ষণাৎ তা জানতে পেরে তাঁর দিকে চেয়ে হাসতে হাসতে একটি গীত গাইতে থাকেন। গীতটি এই -
ওরে কুশীলব, কি কর গৌরব, ধরা না দিলে কি পার ধরতে?
No comments:
Post a Comment