সেই পাবনী-মহিমা ভাগীরথীর যেখানে হউক এক বিন্দুতেও বিদ্যমান। আকারে সীমাবদ্ধ হলেও তাঁতে ভগবানের অনন্তত্ব, অখণ্ডত্ব, সর্বশক্তিমত্তার ত্রুটি থাকে না। যে জগজ্জননী বিশ্ববাসিনী, তিনিই আবার বিন্দুবাসিনী; বিশ্ববাসিনী অবস্থায়ও তিনি যেমন, বিন্দুবাসিনী অবস্থাতেও ঠিক তেমনি। লীলাময়ী কখনো দিগম্বরা, কখনো সাম্বরা; সকল অবস্থায়ই তিনি। তুমি থিয়েটারের অভিনেতা, যে-সাজই ধর না কেন তোমার তুমিত্ব সকল বেশেই সমানভাবে থাকে। এ-সকল প্রত্যক্ষ দর্শন দ্বারা ভক্তের বা সাধকের উপলব্ধির কথা, পুস্তকপাঠকের কথার কথা নয় বা কূট বিচারের কথা নয়।
যিনি অনন্ত বা অখণ্ড, তিনি সান্ত বা খণ্ড হতে পারেন না - এ কথাটি বললে তাঁর অনন্তত্বের প্রতিবাদ করা হয়। অনন্তের যদি সান্ত হবার শক্তি না থাকে, তাহলে তাঁর অনন্তত্ব কোথায় রইল? তিনি কেবল অনন্ত আর কিছু নন - এটি বললেই তাঁর অনন্তের গণ্ডী দেওয়া হয়; সাকার-উপাসকদের সাকার-উপাসনা দ্বারা গণ্ডী দেওয়া হয় না।
রামপ্রসাদ তাঁর গানে বলেছেন -
"রামপ্রসাদ বলে, মাতৃভাবে আমি তত্ত্ব করি যাঁরে,
চাতরে কি ভাঙ্গবো হাঁড়ি বুঝনারে মন ঠারে ঠোরে।"
তাঁর আর একটি গীত -
"কে জানে সে কালী কেমন, ষড়দর্শনে না পায় দরশন।
মূলাধারে সহস্রারে যোগী যারে করে মনন,
পদ্মবনে হংসসনে হংসীরূপে করে রমণ।
আত্মারামের আত্মা কালী, রাম-প্রেয়সী সীতা যেমন,
কালী সর্বঘটে বিরাজ করে ইচ্ছাময়ীর ইচ্ছা যেমন॥
প্রসবে ব্রহ্মাণ্ড-অণ্ড প্রকাণ্ডতা বুঝ কেমন,
আমার মন বুঝেছে প্রাণ বুঝে না,
ধরবে শশী হয়ে বামন।"
No comments:
Post a Comment