কণ্ঠে মুরলীর স্বর, বিশাল বক্ষঃস্থল, আজানুলম্বিত বাহুযুগল, শোভমান পা দুটি, কমলা অপেক্ষাও কোমল চরণতল, স্পর্শে লৌহদেহ কাঞ্চনময় হয়। যাবতীয় পূর্ণগুণে শ্রীঅঙ্গ পরিপূরিত। তার মধ্যে দয়াই যেন ষোল-আনার অধিক; দয়ার বিতরণও মুক্তহস্তে; তিলবৎ স্থলে তালবৎ দান, তাতেই দর্শকবৃন্দ বিভোর; সুতরাং শ্রীআধারে কত কি আছে, তা দেখবার কেহ অবকাশ পাননি। লীলা অতি গভীর, পাতালও নিজে তল পায় না। বাহ্যৈশ্বর্য কিছুমাত্র নেই; অন্তরৈশ্বর্যে কিন্তু কোটি কোটি বিশ্বও তলিয়ে যায়, সেজন্য রামকৃষ্ণলীলা মুখে বলা যায় না। এ লীলা শুনবার নয়, কেবল দেখবার। যা দেখা যায়, তা কথায় প্রকাশিত হবার নয়। ঠাকুর যেমন গুপ্তাবতার, তাঁর লীলাও তদ্রূপ। অদ্ভুত খেলা! মহাব্যক্ত হয়ে মহাগুপ্ত। অতি সরলকে বুঝা - মহাদায়। অতি সরলে যেমন অতি বাঁকার ভাব, ঠিক তেমনি ব্যক্তাবতারে গুপ্তাবতারের ভাব। বস্তু প্রত্যক্ষ না হলে, এক বস্তুতে বিপরীত ভাবের খেলা বুঝবার নয়।
পা। ঠিক বটে, মশায়। এখানকার কথাগুলি শুনতে বেশ লাগছে কিন্তু কিছু বুঝা যাচ্ছে না। বাহ্যৈশ্বর্য অন্তরৈশ্বর্য কি রকম? ব্যক্ত হয়ে গুপ্ত, সরল বা সোজা হয়ে বাঁকা - এই বা কি প্রকার?
ভ। ঈশ্বরের লীলাতত্ত্ব এত খুলে বলা যায় না; ইঙ্গিত-ইশারায় বুঝে নিতে হয়। চোখে, নাকে, বদন-ভঙ্গিমাতে যেমন বলতে পারে, বচনে তেমন পারে না। আমি বরাবরই তোমাকে বলে আসছি - আমি মূর্খ মানুষ, ভাষা-জ্ঞান নেই, শাস্ত্রপাঠ নেই, তীর্থ-পর্যটন নেই, সাধন-ভজন নেই, আমার বল বুদ্ধি সহায় সম্বল সবই রামকৃষ্ণদেব; তিনি যেমন দেখাচ্ছেন, উপলব্ধি করাচ্ছেন, সেগুলিই যেমন করে হোক কুঁকিয়ে কাঁকিয়ে তোমাকে বলছি এইমাত্র। বাহ্যৈশ্বর্য কাকে বলে জান? যে-ঐশ্বর্যের বলে পাষাণ মানুষ হয়ে গেল, কাঠের নৌকা সোনা হয়ে গেল, ভীষণ হরধনু বালকের হাতে দুখানা হয়ে
No comments:
Post a Comment