Thursday, March 29, 2018

১২৪

কেউ বা বলতেন, "দেহি মে চৈতন্যম্", আবার কেউ বা কেবল ঠাকুরের পা-তলে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদে মাটি ভিজাতেন।

এখানে আমার একটি কথা আছে। কথাটি - সকল বিষয়েরই ছবি আছে; যে ঘটনাটি কথায় শুনলে, তার ছবিটি একবার চোখ মুদে দেখ দেখি। এ ছবিটি যদি তুমি দেখতে পাও, তাহলে তৎক্ষণাৎ বুঝবে যে ঠাকুরের কৃপায় কেমন চকিতের মধ্যে মহাবিরোধিনী ভয়ঙ্করী অবিদ্যা-মায়ার তমঃ-আবরণ দূরীভূত হতো। জন্ম জন্ম কঠোর তপস্যাতেও যে-বস্তু জীবের লাভ হয় না, প্রভুদেবের দর্শনে ও স্পর্শে অপেক্ষাকৃত অধিক দুর্লভ বস্তু লাভ হতো। ঠাকুরের করুণার সীমা নেই। সন্দেহ-আঁধারের জন্যই পণ্ডিতেরা কিছু পূর্বে অহঙ্কারজনিত বিদ্যাভিমানে উন্নতমস্তক ছিলেন; প্রভুদেবের স্পর্শেই সেই মস্তক ভূমিতলে বিলুণ্ঠিত; এর অর্থ - তর্কাবস্থায় যে তত্ত্ব তার্কিকদের চক্ষের অপ্রত্যক্ষীভূত ছিল, ঠাকুরের স্পর্শশক্তিতে সেই তত্ত্ব দিনালোকে বস্তুর ন্যায় প্রত্যক্ষীভূত হলো। দয়ানিধি কল্পতরু ভগবান চৈতন্যদানে তমঃ দূর করে দিয়ে সত্য তত্ত্ব প্রত্যক্ষ করবার শক্তি দিলেন।

আর এক কথা, এ সন্দেহই জগতের যাবতীয় জীবকে ঘানিযন্ত্রে আবদ্ধচক্ষু বৃষের ন্যায় সংসার-কর্মক্ষেত্রে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। সাধনার পথেও এ তিমির তিরোহিত হয় বটে, কিন্তু সেটি জন্ম জন্ম কঠোর সাধনার ফল। আর এ দিকে রামকৃষ্ণদেবের মহিমা দেখ। সাধনার পথে তমোনাশ আর প্রভুর কৃপায় তমোনাশ এ দুয়ে তফাত কত জান? যেমন ভিক্ষাবৃত্তি দ্বারা পদব্রজে বৃন্দাবনগমন আর আহার্য দ্রব্যাদি সহ টিকিট লাভে রেলপথে বৃন্দাবনগমন। দ্বিতীয় উপমা - কূপ-খনন দ্বারা জলপান ও স্বচ্ছসলিলা পুষ্করিণীতে জলপান। যাঁর স্পর্শমাত্র জীবের চৈতন্যোদয় হয়, তিনি কি বস্তু এ কি জীবের প্রণিধানে আসে? ভাই, একবার মন প্রাণ খুলে জয় রামকৃষ্ণ বল। জীব অধীতশাস্ত্র হলেও, বিনা চৈতন্যে সে পশুর কিঞ্চিৎ উচ্চে

No comments:

Post a Comment