Thursday, March 29, 2018

১৩১

সোজা হয়েও অতি বাঁকা - সেটা কেমন ধারা, ধীর স্থির চিত্তে শোন। রামকৃষ্ণদেবের জন্মস্থান হলো এমন একটি স্থানে, যে স্থানটি তাঁর জন্মাবার পূর্বে জনসাধারণের পরিচিত হবার কোন কারণ নেই। যেখানে তাঁর পিতৃদেবের আবাসটি অর্থাৎ যে পুণ্য বাস্তুতে প্রভুদেবের জন্ম হলো, সেটি গ্রামের ভদ্রপল্লীর মধ্যে। স্থানটি গ্রামের এক প্রান্তভাগে - প্রতিবাসী জোলা-তাঁতি আর ডোম, যাদের হিন্দু হীনজাতি বা ইতরজাতি বলে। অদূরে শ্মশান, আবিল ডাঙা, নানাজাতীয় গাছপাতায় পরিপূর্ণ, মৃতদেহ-লোলুপ শকুনি কুকুর ও শিয়ালের নৃত্য-ভূমি, নিকটে একটি খাল, সন্ধ্যার পর একলা যাওয়া যায় না। পিতৃদেব তাই কোন্ একজন সম্পত্তিমান, সম্পত্তির মধ্যে সাতপোয়া জমি, গরিবের একশেষ; কিন্তু বুঝে যেও, দীন নন। ভিটার মধ্যে একখানি আবাস-বাটী, অর্থাভাবে কাঠের বদলে বাঁশের সাজ, কুঁড়েঘরের মতো একখানি ঠাকুরঘর, একখানি রসুইঘর আর একটি ঢেঁকিশালা। স্থানাভাবে প্রভুদেব ভূমিষ্ঠ হলেন ঢেঁকিশালে। জন্মের পর তাঁকে পালন করলেন একটি কামারের ঘরের দুঃখিনী কড়ে রাঁড়ি। নিকটে সম্পত্তিমান লোকের বাস আছে বটে, তাঁদেরও বড় পরিবার, ঘরে ছেলেপুলেও অনেক; রামকৃষ্ণদেব কিছু বড় হলে তাঁদের ছেলেদের সঙ্গে তত না মিশে মিশলেন অতি দুঃখী দীন খেটে-খেকো লোকের ছেলেদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে সর্বদা বাস, তাদের সঙ্গে খেলা, তাদের সঙ্গে গরু চরানো। লেখাপড়া শিখবার নামটি মাত্র নেই। বেশি বয়সে অভিভাবকদের জেদে পাঠশালে গেলেন, কিন্তু লেখাপড়ায় মোটেই মন নেই। অনেক কষ্টে বিদ্যা হলো কাঠাকিয়ে পর্যন্ত। কিছু কিছু বর্ণপরিচয় হলো, তালপাতায় ঠাকুরের নাম লিখতে শিখলেন। এখানেই বিদ্যার খতম। পূর্ণ বালক বয়সে এবং যৌবনের প্রারম্ভে ঠাকুরবাড়ির পূজারীর চাকরিতে নিযুক্ত হলেন, সেই ঠাকুরবাড়ি কৈবর্তের, এ ঠাকুরবাড়িতে কোন উচ্চ জাতিই প্রকাশ্যে প্রসাদ গ্রহণ

No comments:

Post a Comment