Thursday, March 29, 2018

১৩২

করেন না। ঠাকুরবাড়ির অধিকারিণী খ্যাতনাম্নী রানী রাসমণি; তাঁর প্রতিষ্ঠিত মা-ভবতারিণীর ও রাধাকান্তের বিপুল আয়োজন সহ নিত্য ভোগরাগের ব্যবস্থা। শুনেছি, প্রার্থীর অভাবে মহাপ্রসাদ গঙ্গায় ফেলে দিতে হতো। কৈবর্তের প্রতিষ্ঠিত ঠাকুরের প্রসাদ বলে ভাল লোক গ্রহণ করত না। রামকৃষ্ণদেব এই ঠাকুরবাড়ির পূজারীর কাজে নিযুক্ত। রামকৃষ্ণ ঠাকুরদের সেবায় অন্যান্য পূজারীদের মতো বৈধ আচার কি পূজাপদ্ধতি রাখতে পারলেন না। তিনি মহাপ্রেমে দেবদেবীর সেবা পূজা ও বেশ করে দিতেন। সাধারণ জীবের প্রকৃতি আর রামকৃষ্ণদেবের প্রকৃতি একেবারে বিপরীত, সুতরাং বিধিবাদীয়দের চক্ষে তিনি পাগল বলে সাব্যস্ত হলেন। তারপর তাঁর বড় ভাই রামকুমার ঠাকুরকে দেশে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিলেন। যাঁর মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হলো, তিনি আবার একজন দশকর্মান্বিত যজমেনে ব্রাহ্মণ। খুব গরিব, পাঁচটি ছয়টি পোষ্য, কষ্টে দিন কাটান। দেশের প্রচলিত রীতি অনুসারে ঠাকুরকে বিয়ে করতে হলো পণ দিয়ে, তাও বড় কম নয়, পুরোপুরি তিন-শ। ঠাকুরের স্বভাব ঠিক একটি ছেলে-মানুষের স্বভাবের মতো। সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ - এ তিনের কোন গন্ধ নেই, আপন-পর বিচার নেই, সম্পর্ক-বিচারের ধার ধারেন না, কামিনী-কাঞ্চনে মোটে মন নেই, যেখানে কামকাঞ্চনের সম্বন্ধ, সেখানে ঘোর ঘৃণা, তার উপর মাঝে মাঝে ভাবাবেশ। পরিধেয় - কখনো কোমরে, কখনো বগলে, সর্বদাই এবং সর্বঠাঁই মোহন কণ্ঠে ভগবৎলীলাগুণগীত। আচারে ব্যভারে মানুষের সঙ্গে একেবারে বিপরীত। কাজেই এখানেও শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও পাগল বলে ঠাওরালেন। তারপর কলকাতায় এলেন। নিজের নিয়মিত কাজ - মা-ভবতারিণীর সেবা - দিনরাত করতে করতে রামকৃষ্ণদেবের অন্তরে প্রবল ঝড় উঠে পড়ল। অতি কঠিন কঠিন সাধন-ভজন আরম্ভ হলো, অধিকাংশই গোপনে; কখনো কখনো মানুষের চক্ষে

No comments:

Post a Comment