Thursday, March 29, 2018

১৩৩

পড়তেন। সাধন-ভজনে অমানুষিক আচার, কখনো বালকবৎ, কখনো পিশাচবৎ, কখনো উন্মাদবৎ। এ সব কেমন জান? হয়তো রামকৃষ্ণদেব মা-ভবতারিণীর খাটে শুয়ে আছেন; কখনো গাছে উঠে মূত্রত্যাগ করছেন, কখনো ঘৃণাবিবর্জিত অবস্থাপন্ন; বিষ্ঠা চন্দনে সমান জ্ঞান, তদ্বৎ-ও আচরণ। এ সকল দেখে শুনে নিম্নশ্রেণীর লোক থেকে মায় শাস্ত্রবিদ্ পণ্ডিত ব্রাহ্মণ পর্যন্ত ঠাকুরকে ঘোর উন্মাদ বলে পাকা জ্ঞান করলেন। সাধন ভজন শেষ করে যখন প্রকৃতিস্থ হলেন, তখন জীবকে জ্ঞান, ভক্তি, চৈতন্য ও ঈশ্বরতত্ত্ব বিলাবার জন্য ব্যাকুল হলেন। জীবের কাম-কাঞ্চনে, বিদ্যামদে, মানে, যশে ঘোর আসক্তি, কেউ রামকৃষ্ণদেবের পসরার জিনিস চায় না; সুতরাং তাঁর কথায় কেউ কর্ণপাতও করে না। ঠাকুর তখন লোকের দ্বারে দ্বারে খরিদদার জুটাবার জন্য যেতে আরম্ভ করলেন। কোথা কে সাধু শুদ্ধাত্মা আছেন, কোথা কে শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত আছেন, তা খুঁজে খুঁজে তাঁদের আশ্রমে গিয়ে দেখা করেন। কেউ ঠাকুরকে ঠাকুরের মতো আদর দেন না। ক্ষুধা পেয়েছে, কারও কাছে কিছু খেতে চাচ্ছেন - সে দিবে না। ঠাকুর নাছোড়বান্দা, রামকৃষ্ণদেবের অতি কোমল অঙ্গ, সত্য সত্যই যেন নবনীতে গড়া। মাটিতে পা ফেলে চলে গেলে পদে পদে পা কেটে রক্তাক্ত হবার আশঙ্কা। একবার ফুলকো লুচির ধারে আঙুল কেটে গিছল - এই ধরে বুঝ কি কোমল শরীর! দশ বিঘৎ চলে যেতে গাড়ির দরকার হতো; এই গাড়ি ভাড়ার জন্য লোকের মুখাপেক্ষী হতে হতো।

এখানে একটা কথা প্রণিধান কর। যে ঠাকুর ত্যাগীর শিরোমণি - যাঁর ত্যাগ কায়বাক্যমনে একতানে বাঁধা, কামিনীকাঞ্চন-স্পর্শে যাঁর অঙ্গবিকার হতো, যিনি পার্থিব কোন বস্তুর প্রার্থী নন, সুতরাং যাঁর কোন বস্তুরই অভাব ছিল না, যাঁর মা-কালীগত প্রাণ, যাঁর সর্বদা মা-কালীর সঙ্গে কথা হতো, যিনি মনে করলেই তৎক্ষণাৎ

No comments:

Post a Comment